সেন্টার ফর ডিজিটাল ইকনমি পলিসি রিসার্চ’-এর প্রেসিডেন্ট তিনি। দেশজুড়ে লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে আর সকলের মতোই চিন্তিত। কী ভবিষ্যৎ রয়েছে আমাদের সামনে? দেশের অর্থনীতি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? নাকি বাড়বে আরও দুর্দশা? আমেরিকা-চিন সম্পর্ক নিয়েই বা কী ভাবছেন? নিজের চিন্তা ও মতামত জানালেন ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য। শুনল প্রহর…
দেশ তথা পৃথিবীব্যাপী করোনা সংক্রমণের জেরে সবকিছু লকড ডাউন। অর্থনীতি ও মানুষের জীবনের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে কী বলবেন?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : প্রথমত, আমার ধারণা অনুযায়ী অন্তত তিন মাস বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলিকে কাজ না করিয়ে বেতন দিতে হবে, অর্থাৎ বছরের ১/৩ ভাগে কোনো উৎপাদন না থাকলেও ব্যয় থাকবে। এই সময় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য হয়তো কোম্পানিগুলির থাকবে না। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ, যারা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্দশাগ্রস্ত, তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ভাইরাস সংক্রমণে না হলেও আর্থিক দুরবস্থায় বেশ কিছু মৃত্যু হবে।
দ্বিতীয়ত, RBI হয়তো কিছু ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তার সুযোগ ছোটো শিল্পগুলির কাছে আসবে না। দেরিতে হলেও ঋণ শোধ তো করতেই হবে, উৎপাদন না হলে তখন অসুবিধায় পড়বে সংস্থাগুলি।
তৃতীয়ত, ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু-র সময় মানুষ খাবার ঠিকমতো পায়নি, এখন হয়তো খাবার আগের তুলনায় পর্যাপ্ত, কিন্তু জনসংখ্যাও বেড়ে গেছে।
তবে, লকডাউনের বিকল্প নেই, কারণ তা না হলে ভাইরাস সংক্রমণে গুণোত্তর প্রগতিতে মানুষের মৃত্যু হবে।
আমরা দেখছি, দিল্লিতে অসংগঠিত শ্রমিকেরা কীভাবে বাড়ি ফিরতে চাইছেন, শহর থেকে গ্রামে, এ-প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : গ্রামগুলি এখন জনবহুল, যারা ফিরছে তারা পর্যাপ্ত খাবার পাবে কিনা সন্দেহ। আর যারা ঘরে ফিরছে, শুধু দিল্লি না, ভারতের সমস্ত জায়গা থেকে, তারা আবার লকডাউন উঠলেই কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন না বলেই মনে হয়। ফলে অর্থনীতি বেশ কিছুদিন স্থগিত হয়ে থাকবে। আর গ্রামে যদি ভাইরাস সংক্রমণ হয় চাষবাসে তার প্রভাব পড়বে, ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। ১৯১৮-তে স্প্যানিশ ফ্লুতে ১৪ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছিলেন, তা-ও তখন জনসংখ্যা এখনকার ১/৭ অংশ ছিল। এই মানুষেরা ঘরে ফিরলে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো দরকার। অর্থনীতি আর কতটা সহ্য করতে পারবে সে সম্পর্কে আমি সন্দিহান। গরম পড়লে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হবে কিনা জানি না, নয়তো দেশ বড় আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হবে।
আরও পড়ুন
লকডাউন পেরোলে কাজ হারাতে পারেন ভারতের ১৩ কোটি মানুষ!
আপনার মতে করোনা পরবর্তী সময়ে কী পরিবর্তন আসতে পারে?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : অটোমেশনের চাহিদা বাড়তে পারে, মানে আমাদের কাজগুলি যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়তে পারে আরো বেশি মাত্রায়। এমনকি ঘরের কাজেও যন্ত্রমানব ব্যবহার হতে পারে। এই সময় এটা প্রমাণিত যে অনেক কাজ আমরা নিজেরাই করে নিতে পারি, কম্পানিগুলি ওয়র্ক ফ্রম হোম নীতিতেই প্রচুর কাজ করিয়ে নিতে পারে, সেক্ষেত্রে বড় অফিস এবং অফিস সংক্রান্ত প্রচুর নিয়োগ না করলেও চলে। এভাবে সকলে ভাবলে আবার ওই আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণীর উপরেই কোপ এসে পড়ে। আসলে ভারতে তরুণ জনসংখ্যা কোরিয়া, চিনের মতই বেশি, কিন্তু ওই দেশগুলির মত শিক্ষার প্রসার নেই। যদি থাকত তাহলে আমরা সারা পৃথিবীর যন্ত্রনির্ভরতার সুযোগ নিতে পারতাম।
তবে কি কৃষিভিত্তিক হওয়ার দরুণ ভারতীয় অর্থনীতি আরো অসুবিধায় পড়বে?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : একটি দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী হিসাবে চিহ্নিত হয় তার প্রযুক্তি, আবিষ্কার ইত্যাদির ক্ষমতা অনুযায়ী। ভারতে মানব সম্পদের প্রতি কোনো গুরুত্বই আরোপ করা হয়নি, না সরকার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে, না বেসরকারি ক্ষেত্রকে সুযোগ দিয়েছে, এর ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, ভারত পিছিয়ে পড়েছে প্রযুক্তি, গবেষণা ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে। জাপান যেভাবে তার মানবসম্পদকে ব্যবহার করেছে তা শিক্ষণীয়। তবে ভারতে যেমন সুন্দর ভাবে লক ডাউনের মত বিশাল আদেশ পালন করানো গেছে, চিনে তা করানো যায়নি। কাজেই এ-কথা বলা যেতেই পারে, ভারতীয় মানবসম্পদের প্রচুর সম্ভাবনা আছে, তাদের তৈরি করে সুযোগ দিতে হবে।
আরও পড়ুন
দারিদ্র্যের সম্মুখীন হতে পারেন ১১ মিলিয়ন মানুষ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের রিপোর্টে চাঞ্চল্য
ভারতীয় সরকারের কাজ সম্পর্কে কী বলবেন?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : খুব সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে লক ডাউনের দিকে এগিয়েছে। থালা বাজানোর ফলে যে মানুষটি টিভি, রেডিও কখনও দেখেনি সেও করোনা সম্পর্কে জানতে পেরেছে, তৈরি হতে পেরেছে। ভারতের কোনো লুকোছাপা নেই করোনা মোকাবিলায়।
করোনা পরবর্তী সময়ে কি চিন মহাশক্তি হতে যাচ্ছে?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : চিন আগেও উৎপাদনের ভরকেন্দ্র ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি-এরা আগেও চিন-নির্ভর ছিল, এখনও তাই। যোগান শৃঙ্খল, সুবিধাজনক কর কাঠামো, সুলভ উৎপাদন ক্ষেত্র ও মানব সম্পদ যে দেশে থাকবে সে-ই ভাল উৎপাদক হতে পারে। এগুলি সব চিনের আছে, ভারতের থাকলে সে-ও পারবে। তবে আগামী দশকের মধ্যে চিনকে সরিয়ে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনাম উৎপাদন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নেবে।
আরও পড়ুন
পেশায় শ্রমিক, মাটি কাটছেন ভরদুপুরে, বিকল্প জীবিকার আর্জি ভাইরাল ‘চা-কাকু’র
ইউ এস-চিন সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলবেন?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : এদের সম্পর্ক কখনওই খুব ভালো নয়। অনেক ধরণের জটিল রাজনীতি রয়েছে এর মধ্যে। এককথায়। চিনকে আমেরিকার ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বলা যায়। দেশদুটি অর্থনৈতিক এক প্রকার যুদ্ধে রত।
আমাদের শেষ প্রশ্ন, আমরা দেখেছি মানুষ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এই অতিমারীর পরেও কি দাঁড়াবে? আপনার কী মনে হয়?
ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য : হ্যাঁ, দাঁড়াবে তো নিশ্চয়ই, তবে কীভাবে, তা কঠিন প্রশ্ন। আবার অন্য অতিমারী আসবে কিনা, কীভাবে আসবে সবটাই অনিশ্চিত। আমরা যে ভাবে সমস্ত বন্য পশুপ্রাণীকে পণ্যজাত করেছিলাম তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে, পুরোনো অভ্যাস, সুসংস্কারগুলি নিয়ে ভেবে প্রয়োজনানুযায়ী ফিরিয়ে আনার সময় হয়েছে বোধহয়।
In this blog information is very useful to me. Thanks for sharing.
ReplyDeleteonline medical store
online medicine